ইসলামে ছোঁয়াচে বলতে কিছু আছে কিনা—এই প্রশ্নে অনেকেই দ্বিধায় ভোগেন। পাঠ্যবই, মিডিয়ায় অহরহ সংক্রামক শব্দ দেখা যায়। সাম্প্রতিক সময়ে করোনা ভাইরাসের প্যান্ডেমিক প্রসার হওয়ায় সংক্রামক শব্দটি দিয়ে মিডিয়া ভরপুর। আকাশে-বাতাসে এখন এই রোগের সংক্রমণ ও এর থেকে বাঁচার পদ্ধতি নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে। কতিপয় মুসলিম মনে করেন—ইসলামে ছোঁয়াচে বলতে কিছু নেই। দলিল হিসেবে তারা বলেন—রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ছোঁয়াচে কোনো রোগ নেই। এ কথা শুনে এক গ্রাম্য সাহাবী দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা তো দেখি, একটা পাঁচড়াযুক্ত উট যখন কোনো পালে থাকে, তখন পুরো উটের পালকেই পাঁচড়ায় আক্রান্ত করে দেয়? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এই হলো তাকদির, বলো দেখি, প্রথমটির পাঁচড়া হলো কীভাবে? (সুনান ইবনে মাজাহ, হাদিস ৮৬, সহীহ) তারা আরো উল্লেখ করে থাকেন :

আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘‘রোগের সংক্রমণ ও অশুভ লক্ষণ বলতে কিছুই নেই। তবে শুভ লক্ষণ মানা আমার নিকট পছন্দনীয়।” [লোকেরা] বললো, শুভ লক্ষণ কী জিনিস? তিনি (ﷺ) বললেন, ‘‘উত্তম বাক্য।’’

বুখারী ৫৭৭৬, মুসলিম ৫৯৩৩-৫৯৩৪

এই একটা-দুটো হাদিস থেকেই তারা এক লাফে সিদ্বান্তে চলে আসেন—দেখেছ, ইসলামে ছোঁয়াচে বলতে কিছু নেই! তাদের মূল সমস্যাটি হলো খণ্ডিত দলিল চর্চা (Scriptural reduction-ism)। সোজা ভাষায় কোনো বিষয়ে ইসলামের সকল বক্তব্য সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করার বদলে এক/দুটি দলিল নিয়ে সাধারণ সিদ্ধান্তে চলে আসা। ইসলামের নামে যত ফেরকা আছে প্রত্যেকেই এই কাজ করে গোমরাহি বেছে নিয়েছে। নব্য-নাস্তিকতার ট্রেন্ডেও এই খণ্ডিত দলিল চর্চার ব্যাপক সয়লাব দেখা যায়। চেরি-পিকিং ফ্যালাসিতে তারা মাহের বলা যায়।

এই খণ্ডিত দলিলচর্চার ব্যাধি থেকে বেরিয়ে যদি ইসলামের সামগ্রিক নির্দেশনাকে সামনে আনা যায় তাহলে বুঝা যায়—এক প্রাণী থেকে অন্য প্রাণীতে রোগের জীবাণু ছড়ানো—এই প্রাকৃতিক বাস্তবতাকে ইসলাম অস্বীকার করে না। যেমন, নবী (ﷺ) বলছেন,

‘‘রোগাক্রান্ত উটকে যেন সুস্থ উটের সাথে একত্রে পানি পানের জায়গায় না আনা হয়। (১) .. কারণ এটি ক্ষতিকর (২)’’

১। সুনান আবু দাউদ ৩৯১১ ২। মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হাদিস নং : ১৯৮৯

“…কুষ্ঠ রোগী থেকে দূরে থাকো, যেভাবে তুমি বাঘ থেকে দূরে থাকো।”

সহীহ বুখারী ৫৭০৭

“যখন তোমরা কোনো অঞ্চলে প্লেগের বিস্তারের সংবাদ শোনো, তখন সেই এলাকায় প্রবেশ করো না। আর তোমরা যেখানে অবস্থান কর, সেখানে প্লেগের বিস্তার ঘটলে সেখান থেকে বেরিয়ে যেয়ো না।”

সহীহ বুখারী ৫৭২৮

অর্থাৎ আমরা বুঝতে পারছি যে—সংক্রামক রোগ বলতে কিছু নেই, বলবার সাথে সাথে এটাও বলা হয়েছে যে, রোগাক্রান্ত উটকে যেন সুস্থ উটের কাছে না আনা হয়। কুষ্ঠ রোগীর থেকে যেন সুস্থ মানুষ দূরত্ব বজায় রাখে। তাহলে প্রশ্ন আসে, নবিজী তো স্পষ্টই বললেন—সংক্রমণ বলে কিছু নেই। আবার বলেন কুষ্ঠ থেকে পালাও—এটা স্ববিরোধী বক্তব্য হয়ে গেল না?! না, স্ববিরোধী নয়; বরং আমাদেরই জ্ঞানের স্বল্পতা। এসকল হাদিসের ক্লাসিক্যাল ব্যাখ্যার আলোকে (১) মাসিক পত্রিকা আল-কাউসারে বলা হয়েছে, “যে হাদীসের উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে এর মূল আরবী পাঠ এর সঠিক তরজমা এই, ‘রোগ-ব্যধি (তার নিজস্ব ক্ষমতায়) একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে লেগে যায় না।’ (সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৫৭৪২)”

অর্থাৎ বোঝা যাচ্ছে যে, রোগের জীবাণু সংক্রমিত হবার প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া হাদীসে বাতিল করা হয়নি; বরং জাহেলি দৃষ্টিভঙ্গিতে বদল আনা হয়েছে। সংক্রমণ যদি হাদীসে অস্বীকারই করা হতো, তাহলে নবী (ﷺ) কেন কুষ্ঠ রোগীর থেকে, প্লেগ থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে বললেন? আর কেনই বা রোগাক্রান্ত উটকে সুস্থ উটের কাছে আনতে নিষেধ করলেন? উস্তাদ শিব্বীর আহমদ চমৎকার বলেছেন:

ছোঁয়াচে রোগ বলে কিছু রোগ আছে। এক রোগীর ছোঁয়ায় আরেকজনের দেহে সংক্রমিত হয় এ রোগ।… যে কোনো প্রকার রোগই হোক, তা কেবল আল্লাহর হুকুমেই কাউকে আক্রান্ত করতে পারে কিন্তু এখানেও একই কথা, আল্লাহ তাআলাই কিছু কিছু রোগকে সংক্রামক করে দিয়েছেন। আল্লাহ প্রদত্ত এই সংক্রমণ শক্তির কারণেই এক রোগী থেকে আরেক রোগীতে তা সংক্রমিত হয়।

শায়েখ সালিহ আল-উসাইমিন বলেছেন:

যদি জানা যায় যে, কোনো বস্তু সংঘটিত হওয়াতে সঠিক কারণ রয়েছে, তাহলে তাকে কারণ হিসাবে মনে করা বৈধ। কিন্তু নিছক ধারণা করে কোনো ঘটনায় অন্য বস্তুর প্রভাব রয়েছে বলে বিশ্বাস করা ঠিক নয়। কোনো বস্তু নিজে নিজেই অন্য ঘটনার কারণ হতে পারে না। ছোঁয়াচে রোগের অস্তিত্ব রয়েছে।… এটা বলা যাবে না যে, নবী (ﷺ) রোগের সংক্রমণ হওয়াকে অস্বীকার করেছেন। কেননা বাস্তব অবস্থা ও অন্যান্য হাদীসের মাধ্যমে এ রকম ধারণাকে খণ্ডন করা হয়েছে।

ফতোওয়া আরকানুল ইসলাম — শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল উসাইমিন(র), পৃষ্ঠা ১১৪-১১৬

সাহাবাদের আমল থেকেও এই অনুধাবনের প্রমাণ মেলে। একবার কুষ্ঠ আক্রান্ত এক মহিলা মহিলা কা’বায় তাওয়াফ করছিলেন। এটা দেখে উমার(রা.) তাঁকে বললেন, “হে আল্লাহর দাসী, অন্য মানুষকে কষ্ট দিও না। হায়, তুমি যদি তোমার বাড়িতেই বসে থাকতে!” এরপর সেই মহিলা বাড়িতে অবস্থান করতে লাগলেন। (মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হাদিস ৯৪৫) ১৭ হিজরীর দিকে শাম অঞ্চলে ভয়াবহ মহামারী ছড়িয়ে পড়ে যা ইতিহাসে এটি Plague of Emmaus (طاعون عمواس) নামে পরিচিত। মুআয বিন জাবাল(রা.) সেই সংক্রামক মহামারীতে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। এরপর সেখানকার শাসক হন আমর ইবনুল আস (রা.)। যেহেতু মহামারীর সময়ে আক্রান্ত এলাকা থেকে বের হয়ে অন্য এলাকায় যেতে রাসুল (ﷺ) নিষেধ করেছেন, তাই সে রোগ থেকে আত্মরক্ষার জন্য আমর ইবনুল আস (রা.) শামবাসীকে সেই এলাকার মধ্যেই একত্রিত অবস্থায় না থেকে পাহাড়ী এলাকায় ছড়িয়ে যেতে বললেন। তার এ বক্তব্য শুনে লোকজন সেখান থেকে বেরিয়ে যায়। তারা বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েন। (২) এদিকে আল্লাহ্ তা’আলা ওই রোগ তাদের থেকে তুলে নেন। মাত্র একজন সাহাবী বাদে অন্য সবাই এই সিদ্ধান্তের উপর একমত হয়েছিলেন। এটা ছিলো শামের সাহাবীদেরও সম্মিলিত কর্ম।বর্ণনাকারী বলেন, আমর ইবনুল আস (রা.)-এর এই অভিমত ও পদক্ষেপ খলিফা উমর (রা.)-এর নিকট পৌঁছালে তিনিও এটিকে অপছন্দ করেন নি।

এই মহামারীর সময়টিতে উমার (রা.) শামে যাচ্ছিলেন। সেখানে মহামারীর সংবাদ পাওয়ার পর তিনি কর্মপন্থা নির্ধারণে তিনি সাহাবীদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে বসলেন। সাহাবাদের মাঝে মতানৈক্য হচ্ছিল। তাই তিনি বয়োজ্যেষ্ঠ মুহাজির কুরাঈশী সাহাবীগণকে ডাকলেন, যারা ছিলেন প্রাথমিক যুগে ইসলাম গ্রহণকারী, রাসু্লুল্লাহ (ﷺ) এর ঘনিষ্ঠ শিষ্যবৃন্দ। তারা পরামর্শ দিলেন, “আপনি লোকজনকে নিয়ে ফিরে যান এবং তাদেরকে এই মহামারীর কবলে ঠেলে দেবেন না।” কিন্তু কিছু সাহাবি এটা পছন্দ করলেন না। যেমন, উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ (রা.) উমার (রা.)কে বললেন, “আপনি কি আল্লাহর নির্ধারিত তাকদির থেকে পলায়ন করার জন্য ফিরে যাচ্ছেন?” তখন উমার (রা) এমন কিছু বললেন যা ছিলো অসাধারণ। তিনি বললেন,

আমরা আল্লাহর তাকদির থেকে আল্লাহর তাকদিরের দিকেই ফিরে যাচ্ছি। তুমি বলো তো, তুমি কিছু উটকে যদি এমন কোন উপত্যকায় দিয়ে এসো, যেখানে আছে দু’টি প্রান্ত। তার মধ্যে একটি হল সবুজ-শ্যামল, আর অন্যটি হল বৃক্ষহীন। এবার ব্যাপারটি কি এমন নয় যে, যদি তুমি সবুজ প্রান্তে চরাও, তাহলে তা আল্লাহর তাকদির অনুযায়ীই চরাচ্ছো? আর যদি তুমি বৃক্ষহীন প্রান্তে চরাও তাহলেও তা আল্লাহর তকদির অনুযায়ীই চরাচ্ছো?

সহীহ বুখারী ৫৭২৯; সহীহ মুসলিম ৫৯১৫

উমার (রা.) তখনও প্লেগ আক্রান্ত এলাকায় প্রবেশ/বের হওয়ায় নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে প্রিয় নবী (ﷺ) এর নির্দেশনা (সম্ভবত) জানতেন না। তাকদিরের ব্যাপারে নিজের অনুধাবনের ভিত্তি এনালাইটিক ফিলসফারের মতো তিনি তার অবস্থান ব্যাখ্যা করলেন। পরে সাহাবি আব্দুর রহমান ইবন আউফ (রা.) তাদের হাদিসটি জানিয়ে দেন।

সুতরাং আমরা বুঝতে পারছি, একদিকে তাকদির নিয়ে আমাদের অনুধাবনের অভাব/দূর্বলতা, আরেকদিকে সালাফদের সুন্নাহ অধ্যয়নে স্বল্পতা/অনীহা/বক্রতা ইত্যাদির মিশেলে নতুন এক ভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। আমাদের উচিত আমল ও প্রতিরোধ ব্যবস্থার মাধ্যমে আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত এই পরীক্ষা সামাল দেয়ার চেষ্টা করা। এক ব্যক্তি (ﷺ) কে জিজ্ঞেস করল, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি কীভাবে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করব? আমার উট ছেড়ে দিয়ে, না বেঁধে রেখে?’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: 

প্রথমে তোমার উট বাঁধ, এরপর আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল কর।

জামে-আর তিরমিজি, ২৫১৭, হাসান হাদিস

আমাদের দিক থেকে ভাবলে বুঝা যায়, তাকদিরের একাংশের উপর আমাদের দখল নেই (তাকদিরে মুবরাম, অর্থাৎ চুড়ান্ত, স্থির, অপরিবর্তনযোগ্য তাকদির)। অপর অংশ থেকে (তাকদিরে মুয়াল্লাক, অর্থাৎ ঝুলন্ত বা পরিবর্তনযোগ্য তাকদির।) আমরা সীমিত ইচ্ছাশক্তি দিয়ে আমরা যে-কোন একটা পথ বেছে নিই। আমরা কোন পথ বেছে নিবো সেটাও আল্লাহর জানেন তার পরিপূর্ণ জ্ঞানের আলোকে (fore-knowledge)। সেটাকেই আল্লাহর আদেশে লিখে রাখা হয়েছে। ( ফলে আল্লাহর জ্ঞানের দিক থেকে সবই মুবরাম। কেননা, যে-কোনো কাজ বা বিষয়ের শেষ ও চূড়ান্ত ফলাফল আল্লাহপাক অনাদিকাল হতেই অবগত আছেন।) বান্দা সেই পথ বেছে না নিলে আর কোন-কোন পথ বেছে নিতো (possible worlds) সেটাও আল্লাহর জ্ঞানের ভেতরেই। উমার (রা) এই বিষয়টিই হতো ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন (আল্লাহু আলাম)। এই সচেতনতা, আমল ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা হোক মু’মিনের হাতিয়ার। আল্লাহুল মুসতায়ান।



তথ্যসূত্র:
১। ইমাম নববী(র.) এর শারহ (ব্যাখ্যা গ্রন্থ) থেকেঃ “অধিকাংশ আলেম বলেছেন, এই হাদিসগুলোর সমন্বয় করতে হবে। এবং এর উভয়ই সহীহ। তাঁরা বলেনঃ হাদিসগুলো সমন্বয়ের উপায় হলো, [ لا عدوى – সংক্রমণ নেই ] এই কথার উদ্যেশ্য হলো জাহিলী যুগের ঐ ধারণাকে নাকচ করা যে, অসুস্থতা ও রোগব্যধি নিজ ক্ষমতাতেই সংক্রমিত হতে পারে এবং এর পেছনে আল্লাহ তা’আলার কোনো ক্ষমতা/ক্রিয়া থাকে না। আর যে হাদিসে বলা হয়েছে [ لا يورد ممرض على مصح – রোগাক্রান্তকে যেন সুস্থের সাথে একত্রে না রাখা হয়], সেখানে আমাদেরকে এদিকেই পথনির্দেশ করা হচ্ছে যে, তার (রোগাক্রান্তের) নিকটবর্তী হলে খুব স্বাভাবিকভাবেই আল্লাহ তা’আলার ক্ষমতা এবং নির্ধারণের (তাকদির) দ্বারা সে যে আক্রান্ত হতে পারে, তা থেকে যেন বিরত থাকা হয়। .তাঁরা (অধিকাংশ আলেম) বলেছেন, ১ম হাদিসের উদ্যেশ্য হলো রোগ নিজে নিজে (আল্লাহর ইচ্ছা ও অনুমতি ব্যতিত) সংক্রমিত হতে পারে – এই ধারণাকে নাকচ করা। এ হাদিসের উদ্যেশ্য এই ব্যাপারকে নাকচ করা নয় যে, তার (রোগাক্রান্তের) নিকটবর্তী হলে আল্লাহ তা’আলার ক্ষমতা এবং নির্ধারণের দ্বারা সে রোগাক্রান্ত হতে পারে। আর ২য় হাদিসে এদিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, তার (রোগাক্রান্ত) নিকটবর্তী হবার দ্বারা আল্লাহর ক্ষমতা, ইচ্ছা ও নির্ধারণের দ্বারা সে যে রোগাক্রান্ত হতে পারে, তা থেকে সাবধান থাকতে হবে। .আমরা এখানে সহীহ হাদিসগুলোর সমন্বয়ের ব্যাপারে যা আলোচনা করলাম, এটিই হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠ আলেমের অনুসৃত সঠিক পন্থা। এবং বিষয়টি এদিকেই নির্দিষ্ট করতে হবে। আবু হুরায়রা(রা.) যে হাদিসের একটি কথা [ ولا عدوى – এবং সংক্রমণ নেই] ভুলে গিয়েছিলেন, এই ব্যাপারটি কোনো প্রভাব সৃষ্টি করে না ২টি কারণেঃপ্রথমত, অধিকাংশ আলেমের মতে বর্ণনাকারীর এই নিজ বর্ণনাকৃত হাদিস ভুলে যাওয়া সেই হাদিসের সহীহ হওয়াকে ত্রুটিযুক্ত করে না। বরং এর (হাদিসের) উপর আমল করা ওয়াজিব হয়ে যায়।দ্বিতীয়ত, হাদিসের এই কথাটি [সংক্রমণ নেই] আবু হুরায়রা(রা.) ছাড়াও অন্যান্যদের রেওয়ায়েত দ্বারা প্রমাণিত। ইমাম মুসলিম(র.) এটি সাইব বিন ইয়াযিদ(রা.), জাবির বিন আব্দুল্লাহ(রা.), আনাস বিন মালিক(রা.), ইবন উমার(রা.) প্রমুখের থেকে রাসুল(ﷺ) এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন। মাযিরী(র.), কাযী ইয়ায(র.) প্রমুখ কিছু আলেম থেকে এই হাদিসের [ لا يورد ممرض على مصح – রোগাক্রান্তকে যেন সুস্থের সাথে একত্রে না রাখা হয়] ব্যাপারে উল্লেখ করেছেন যে, এটি এই হাদিসকে মানসুখ করে দিয়েছে [ لا عدوى – সংক্রমণ নেই ]। কিন্তু এই কথা সঠিক নয় ২টি কারণে। প্রথমত, নাসেখের একটি লক্ষণ হলো উভয় হাদিসের মধ্যে সমন্বয় করা অসম্ভব হয়ে যায়। কিন্তু এখানে তেমন কিছুই হয়নি। আমরা এদেরকে সমন্বয় করেছি।দ্বিতীয়ত, এর আরেকটি লক্ষণ হলো ইতিহাসটি (অর্থাৎ কোনটি নাসেখ আর কোনটি মানসুখ) জানা থাকা। নাসেখের ইতিহাসটি জানা থাকা। কিন্তু এখানে এর কোনোটিই নেই। .কেউ কেউ বলেছেন, [ لا عدوى – সংক্রমণ নেই ] হাদিসের অর্থ এর যাহির (বা বাহ্যিক অর্থ) এর উপর নিতে হবে। তাদের মতে, لا يورد ممرض على مصح [রোগাক্রান্তকে যেন সুস্থের সাথে একত্রে না রাখা হয়] এই আদেশের কারণ রোগের সংক্রমণ নয়। বরং তা রোগীর দুর্গন্ধে কষ্ট হতে পারে এবং তার কদাকার চেহারা হয়ে যাবার কারণে। কিন্তু (এটি সঠিক মত নয়) আমরা শুরুতে যে মতটি উল্লেখ করেছিলাম, সেটিই সঠিক অভিমত। আল্লাহই সর্বোত্তম জানেন। [অনুবাদ করেছেন: মুহাম্মাদ মুশফিকুর রহমান মিনার। মুল পোস্ট: ক্লিক করুন]
(২) ইবন কাসির, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া; খণ্ড-৭, পৃষ্ঠা ১৪৮ (ঢাকা: ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ)

সংযোজন:
১। এক হাদিসে দেখা যায়, রাসুলুল্লাহ(ﷺ) কুষ্ঠ রোগগ্রস্ত এক ব্যক্তির হাত ধরে তা নিজের আহারের পাত্রের মধ্যে রেখে বলেনঃ আল্লাহর উপর আস্থা রেখে এবং আল্লাহর উপর ভরসা করে খাও। (তিরমিযী ১৮১৭, আবু দাউদ ৩৯২৫, মিশকাত ৪৫৮৫) কিন্তু হাদিসের তাহকীকে দেখা যায় এটি একটি দুর্বল হাদিস। (নাসিরুদ্দিন আলবানী, য‘ঈফ ও জাল হাদীছ সিরিজ [সিলসিলাহ আদ-দ্বঈফাহ]; ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২২৮-২২৯ (তাওহীদ পাবলিকেশন্স)



আরো পড়ুন: মুহাম্মাদ মুশফিকুর রহমান মিনার, ইসলাম কি ছোঁয়াচে রোগের অস্তিত্ব অস্বীকার করে? মুসলিম মিডিয়া
https://www.muslimmedia.info/2018/09/24/does-islam-deny-the-existence-of-contagious-diseases#_ftn7


Copyright Rafan Ahmed. No part of writings in this blog can be published in print or online without prior permission from Dr. Rafan. The ads are shown by blog provider. Dr. Rafan doesn’t take any responsibility of the adds being shown, as it is out of his control. Use adblock to avoid these. Feature Image is from google images