“ধাৰ্মিকেরা খুবই অমানবিক, তারা নিজেদের ধর্ম ও ধর্মের বই ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম ও ধর্মের বইকে মর্যাদা দেয় না । এক ধর্মের ধাৰ্মিক অন্য ধর্মের পবিত্রগ্রন্থ ও গৃহকে অবলীলায় অপমানিত করতে পারে, যা নাস্তিকেরা কখনো করে না ।”

হুমায়ুন আজাদ, আমার অবিশ্বাস, পৃ. ৭৮

এই অংশটুকু পড়ে আমি বেশ বিরক্ত বোধ করেছি। মানুষ কতটা স্ববিরোধী ও বাস্তবজ্ঞানহীন হলে এমন মন্তব্য করতে পারে তা চিন্তাশীল সমাজের ভেবে দেখা জরুরি। আমার অবিশ্বাস পড়লে দেখা যায়, ড. আজাদ পুরো বই জুড়ে বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থের বদনাম গেয়েছেন, ধার্মিকদের বিকলনগ্রস্থ (পাগল) বলেছেন, ধর্মপ্রচারকারী মহাপুরুষদের মনোবিকলনগ্রস্থ (মহাপাগল) বলেছেন! উনি নিজেই তো মর্যাদা দিলেন না, আবার ধার্মিকদের নিয়ে বড় বড় কথা বলছেন! অদ্ভূত স্ববিরোধীতা!

উনার বাতুল দাবি নাস্তিক নাকি অন্য ধর্মের পবিত্রগ্রন্থকে কখনো অবমাননা করে না! অথচ নাস্তিকদের আচরণ উলটো প্রমাণ বহন করে। যেমন – ব্রিসবেন ইউনিভার্সিটির আইনবিদ, নাস্তিক এলেক্স স্টুয়ার্ট কুর্‌আন ও বাইবেলের পাতায় মারিজুয়ানা পুরে দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে ধোঁয়া টেনেছেন। তিনি পরীক্ষা করে দেখতে চেয়ছিলেন কোন পাতা ভালো পুড়ে, সেটা দিয়ে বিড়ি টানা যাবে! এই দুই গ্রন্থকে তিনি অত্যন্ত নোংরা ভাষায় গালমন্দ করেছেন! বাহ, কি মানবিকতা!

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে দেখতে পাওয়া যায়, #Burn_Quran_Challenge হ্যাশটাগ দিয়ে বেশ কিছু নাস্তিক কুর্‌আন অবমাননার বিভিন্ন ভিডিও পোস্ট করেছে। কেউ কুর্‌আন পোড়াচ্ছে, কেউ দুমড়ে-মুছড়ে ছিড়ে ফেলছে! শিয়া ধর্ম ত্যাগ করে নাস্তিক হওয়া আরমিন নবাবীকে দেখা গেছে এমনই এক ভিডিও শেয়ার করে সোৎসাহে সমর্থন দিতে। এই পোস্টের কমেন্ট অংশে দেখা যায় আরো অনেক নাস্তিক জোরেশোরে এই কর্মের পক্ষে সাফাই গাইছে!

লাইভ ভিডিওতে পবিত্র কুর্‌আনের উপর জুতা রেখে নাস্তিক মাসুদ

বাংলাদেশের নাস্তিকও পিছিয়ে নেই এইক্ষেত্রে। এক ভিডিওতে দেখা যায়, মুরতাদ মুফতি মাসুদ পবিত্র কুর্‌আনের উপর চপ্পল রেখে ভিডিও করছে, নিজ মুখে বলছে – উনি সবসময় কুর্‌আনের উপর জুতা রাখেন। বুক ফুলিয়ে বলছে – আমি আপনাদের অনুভূতিতে আঘাত করলাম! সুতরাং ড. আজাদের মানদণ্ডে নাস্তিকেরাও যে খুবই অমানবিক ও অসামাজিক তাতে সন্দেহ নেই।

ধর্মগ্রন্থ আবমাননার কাজ সাধারণত কিছু খ্রিস্টানদের করতে/সমর্থন করতে দেখা যায়। যেমন – যাজক টেরি জোনস প্রথমে এই বার্ন কুর্‌আন ডে-এর আয়োজন করার চেষ্টা করেছিলেন। বাংলাদেশে খ্রিস্টান মিশনারিদের খপ্পর থেকে ফিরে আসা মানুষদের সাক্ষ্যতে জানা যায় – খ্রিস্টান হিসেবে গৃহীত হওয়ার আগে তাদের পবিত্র কুর্‌আনের উপর দাঁড়াতে বলা হয়, প্রশ্রাব করতে বলা হয়!

একজন প্রকৃত মুসলিম এদের থেকে অনেক উঁচুতে অবস্থান করেন। তিনি কখনো অন্য ধর্মের গ্রন্থকে অবমাননা করেন না। কারণ, হতে পারে এই গ্রন্থটি এককালে স্রষ্টার প্রেরিত বাণী ছিলো, যা কালক্রমে বিকৃত হয়ে গেছে। (যেমন খ্রিস্টধর্মের বাইবেল বিকৃত হওয়ার প্রমাণ দেখুন এই লিংকে।) তাই এতে আল্লাহ্‌র বাণীর কিছু অংশ থাকার সম্ভাবনা আছে। তিনি সত্যের অনুসরণ করেন, ও অন্যের কাছে আন্তরিকভাবে সত্যের প্রচার ও প্রসার করতে সচেষ্ট থাকেন। অন্য ধর্মের পবিত্রগৃহ অর্থাৎ উপাসনালয়কেও তিনি অবমাননা করেন না। তিনি অন্য ধর্মের উপাস্যদের কোন গালি দেন না, কারণ আল-কুর্‌আন তা নিষেধ করা হয়েছে। তাই বোঝা যাচ্ছে এক্ষেত্রে আমাদের নৈতিক আচরণ প্রশংসার দাবি রাখে।

© 2019. No part of this article can be published in print form without prior approval from author.